ডা. মো. রহমত উল্লাহ
সোনাপুর, নোয়াখালী
প্রশ্ন-১ : সুপারি এবং নারিকেলের কড়া ঝরে যায়। করণীয় কী?
উত্তর : নারিকেল কচি অবস্থায় ঝরে যাওয়ার কারণ হলো নারিকেল বাগানের মাটিতে রসের অভাব হলে রোগপোকার আক্রমণ হলে, সময় উপযোগী পরিচর্যার অভাবে খাদ্য ও হরমোনের অভাব হলে।
-নারিকেল ফল ঝরা রোধ করতে হলে গাছের গোড়ায় সুষম মাত্রায় জৈব ও রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে হবে।
-নারিকেল বাগান বিশেষ করে গাছের গোড়া সব সময় পরিষ্কার রাখতে হবে।
-মাকড় আক্রান্ত ফল নষ্ট বা পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
-পটাশ ও বোরন সার অবশ্যই প্রয়োগ করতে হবে।
-মাকড়নাশক ভার্টিমেক অথবা ওমাইট ১৫ দিন পর পর অনুমোদিত মাত্রায় ২/৩ বার স্প্রে করতে হবে।
সুপারির মোচা ও কুঁড়ি ঝরা রোগটি প্রধানত গ্রীষ্মকালে হয়ে থাকে। আক্রান্ত গাছের মোচা কেটে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। রোগের লক্ষণ দেখা দিলে ডাইথেন এম-৪৫ অথবা নোইন নামক ছত্রাকনাশক প্রতি লিটার পানিতে ১ চামচ হিসেবে গাছে মোচা বের হলেই ১৫ দিন পর পর ৪-৫ বার স্প্রে করতে হবে।
প্রশ্ন-২ : বাউ আমের চারা কোথায় পাওয়া যায়?
উত্তর : বাউ (BAU)) আম বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) জার্মপ্লাজম সেন্টারের উদ্ভাবিত জাত। এ পর্যন্ত ১৭টি আমের জাত উদ্ভাবিত হয়েছে। আমের চারা বাকৃবি (BAU) জার্মপ্লাজম সেন্টারে পাবেন। এছাড়া সরকারি ও বেসরকারি নার্সারিতে এ জাতের আমের চারা পাওয়া যেতে পারে।
আবদুল খালেক
মিঠাপুকুর, রংপুর
প্রশ্ন : পেঁয়াজের পাতায় প্রথমে বাদামি রঙের দাগ পড়ে ও পরে পাতা ওপর দিক থেকে মরে যায়। প্রতিকার কী?
উত্তর : এটি পেঁয়াজের ছত্রাকজনিত রোগ। এ রোগ দমন করতে হলে যা করণীয় তাহলো-
০ আক্রান্ত গাছের পরিত্যক্ত অংশ পুড়িয়ে ফেলা।
০ বীজ শোধন করতে হবে (প্রতি কেজি বীজে ২.৫ গ্রাম (প্রোডেক্স ২০০ ডচ বা ২ গ্রাম ব্যভিস্টিন)।
০ রোগ দেখা দিলে প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম ইপ্রোভিয়ন (রোভরাল, ইভারাল) এককভাবে অথবা ২ গ্রাম রোভরাল+ ২ গ্রাম রিডোমিল গোল্ড একত্রে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
মো. হালিম মিয়া
ধুনট, বগুড়া
প্রশ্ন : ভুট্টার চারার গোড়া বেঁকে যায়। করণীয় কী?
উত্তর : কাটুই পোকা ভুট্টা গাছের গোড়া কেটে দেয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ভুট্টার চারা গাছে মাইজ মরার লক্ষণ দেখা যায়। এটি ভুট্টার ক্ষতিকারক পোকা। এ পোকা দমনে করণীয় হলো-
-আক্রান্ত জমিতে সেচ দিলে কাটুই পোকার কীড়া মাটির ওপরে উঠে আসে। তখন পোকা সংগ্রহ করে মেরে ফেলা যায়।
-জমিতে পোকা খেকো পাখি বসার ব্যবস্থা করা।
-বিষটোপ ব্যবহার করা।
-দানাদার বালাইনাশক হেক্টরপ্রতি কার্বোফুরান ৫জি ১০ কেজি শেষ চাষে ব্যবহার করা।
-এ পোকা আক্রমণ বেশি হলে ডার্সবান বা পাইরিফস ৫ মিলি. প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
মো. বিপুল মিয়া
ময়মনসিংহ
প্রশ্ন : শীতকালে মাছের খাবার সম্পর্কে জানতে চাই।
উত্তর : সাধারণত শীতকালে মাছ খাবার খাওয়া কিছুটা কমিয়ে দেয় বলে মাছের বৃদ্ধি তুলনামূলকভাবে কম হয়। তাছাড়া এ সময় মাছের বিভিন্ন প্রকার রোগব্যাধির প্রকোপ দেখা যায়। এ জন্য মাছের খাবার প্রয়োগে সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। অনেক মৎস্য চাষি মনে করেন মাছের বৃদ্ধি কম হয় বলে খাবারের মাত্রা বাড়িয়ে দিলে হয়তো মাছ তাড়াতাড়ি বড় হবে। এটা ভুল ধারণা। এ সময় অতিরিক্ত খাবার প্রয়োগের ফলে কিছু পরিমাণ খাবার পুকুরের পানিতে অবশিষ্ট থেকে যায় যা পরবর্তীতে পচে গিয়ে পানি দূষিত করে এবং শীতকালে মাছের ঘা, ক্ষত, পচন ইত্যাদি রোগের একটি প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অন্যান্য সময়ের মতো এ সময়ও পুকুরে প্রাকৃতিক খাবারের পাশাপাশি পর্যাপ্ত পরিমাণে সম্পূরক খাবার প্রয়োগ করতে হবে। তবে খেয়াল রাখতে সরবরাহকৃত খাবারের পরিমাণ যেন অতিরিক্ত না হয়ে যায়। এজন্য ট্রে বা পাত্রে করে পুকুরের একটি নির্দিষ্ট স্থানে খাবার প্রয়োগ করে প্রতিদিন পরীক্ষা করে দেখতে হবে যে সরবরাহকৃত খাবার অবশিষ্ট থেকে যাচ্ছে কি না। ট্রে বা পাত্রে খাবার থেকে গেলে পরবর্তী খাবার প্রয়োগের সময় পরিমাণ কমিয়ে দিতে হবে। এভাবে পরিমাণমতো খাবার প্রয়োগ ও মাছের যত্ন নিলে মাছকে বিভিন্ন রোগের হাত থেকে যেমন রক্ষা করা সম্ভব তেমনি মাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধিও নিশ্চিত হয়।
জিয়াউল হক
পাবনা
প্রশ্ন : মাছ জেগে থাকে বা ভেসে ওঠে। কী করণীয়?
উত্তর : অতিরিক্ত পরিমাণে সার ব্যবহার করার কারণে আপনার পুকুরের পানি গাঢ়ে সবুজ হয়ে গেছে। এজন্য পানিতে অক্সিজেনের অভাবে মাছ ভেসে থাকছে। এ মুহূর্তে পুকুরে প্রতি শতকে ৩০০-৩৫০ গ্রাম করে চুন প্রয়োগ করবেন। চুন অবশ্যই পানিতে গুলিয়ে ঠাণ্ডা করে পুকুরে ছিটিয়ে দেবেন। খেয়াল রাখবেন পুকুরের পানি যেন হালকা সবুজ থাকে। গাঢ় সবুজ হয়ে গেলে পুকুরে এ ধরনের সমস্যা হয়ে থাকে। চুন দেয়ার পরে অল্প পরিমাণে পটাসিয়াম পারম্যাঙ্গানেট কাপড়ে পুঁটলি বেঁধে পুকুরের ২-৩ জায়গায় পানির ওপরের স্তরে ডুবিয়ে রাখবেন তাতে অক্সিজেনের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে।
ইয়াকুব আলি
কুমিল্লা
প্রশ্ন : পাঙ্গাশ মাছের পেট বড় হয়ে যাচ্ছে কিন্তু লম্বা হচ্ছে না। কী করণীয়?
উত্তর : চার ফিট পানির সঙ্গে আরও এক থেকে দেড় ফিট পানি বাড়িয়ে দেবেন। খাবারের সঙ্গে টেরামাইসিন ক্যাপসুলের গুঁড়া প্রতি ১ কেজি খাবারের জন্য ১ গ্রাম করে মিশিয়ে মাছকে খাওয়াতে হবে। প্রতি শতকে ৪০০ গ্রাম করে চুন পানিতে গুলিয়ে ঠাণ্ডা করে পুকুরে দেবেন। এরপর প্রতি শতকে ১০০ গ্রাম করে টিএসপি সার দেবেন সাত দিন পরপর ২ সপ্তাহ।
শিহাব
দিনাজপুর
প্রশ্ন : কোয়েল পালনের সুবিধাগুলো জানতে চাই।
উত্তর : ১. কম পুঁজি নিয়ে কোয়েল খামার করা যায়।
২. আকারে ছোট বলে পালনের জায়গা খুব কম লাগে। একটি মুরগি পালনের সমপরিমাণ জায়গায় ৮ থেকে ১০টি কোয়েল পালন করা যায়।
৩. কোয়েলের রোগবালাই কম।
৪. রোগ প্রতিষেধক টিকা দেয়ার ঝামেলা কম।
৫. ৬-৭ সপ্তাহ বয়সে এরা ডিম দেয়। বছরে একটি কোয়েল ২৯০টি থেকে ৩০০টি ডিম দিয়ে থাকে।
৬. কোয়েল পাখির খাদ্য চাহিদা কম অথচ খুব দ্রুত বাড়ে। প্রতিদিন গড়ে ২০ থেকে ২৫ গ্রাম খাবার খায়।
৭. ১৭ থেকে ১৮ দিনে কোয়েলের ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়।
৮. কোয়েলের মাংস ও ডিম সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর। কোয়েলের দেহের ৭২% মাংস হিসেবে খাওয়া যায়। কোয়েলের মাংস চর্বির পরিমাণ কম থাকে।
৯. বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কোয়েল পালন লাভজনক।
মাহবুব
ময়মনসিংহ
প্রশ্ন : গরুর ক্ষুরারোগ হয়েছে, কী করণীয়?
উত্তর : প্রতিরোধ : রোগ প্রতিরোধ অত্যন্ত জটিল। আক্রান্ত পশুকে আলাদা করে শুকনো স্থানে রাখতে হবে। রুগ্ণ পশুর ব্যবহৃত দ্রব্যাদি জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। ক্ষুরা রোগে মৃত পশুকে ৬ ফুট মাটির নিচে পুঁতে ফেলতে হবে। রোগ প্রতিরোধের জন্য নিকটস্থ পশু হাসপাতাল থেকে ক্ষুরারোগের প্রতিষেধক পলিজ্যালেন্ট টিকা প্রদান করতে হবে।
চিকিৎসা : পশুর মুখে ও পায়ে ঘা হলে হালকা গরম পানিতে ফিটকিরি গুঁড়া করে ১ গ্রাম ১ লিটার পানিতে বা পটাসিয়াম পারম্যাঙ্গানেট ১ গ্রাম/ ১০ লিটার পানিতে এর যে কোনো একটি দ্বারা ক্ষতস্থান পরিষ্কার করে এবং মুখের ক্ষেত্রে এপথোকোয়ার পাউডার ২৫ গ্রাম করে ৩ বেলা ৫-৭ দিন জিহ্বার ওপর লাগিয়ে দিতে হবে এবং পায়ের ঘা ধোয়ার পর পরিষ্কার ন্যাকড়া দিয়ে মুছে ৫০ মিলি. তারপিন তেলের সঙ্গে সমপরিমাণ নারিকেল তেল মিশিয়ে তার সঙ্গে ৫ গ্রাম ভাজা সোহাগার গুঁড়া মিশিয়ে দিনে ৪-৫ বার ব্যবহার করতে হবে।
অতঃপর
১. Sumid Vet Powder (সুমিড ভেট পাউডার) + Doxacil Vet Powder (ডক্সাসিল ভেট পাউডার) নারিকেল তেলের সঙ্গে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে আক্রান্ত স্থান ভালোভাবে জীবাণুনাশক দ্বারা ধুয়ে দিনে ২ বার লাগাতে হবে।
২. Genacyn Vet 10 Injection (জেনাসিন ভেট ১০ ইনজেকশন) অথবা Ampicin Vet Injection (এমপিসিন ভেট ইনজেকশন) (গর্ভাবস্থায় থাকলে) দিতে হবে।
৩. Kop-Vet Injection (কপ ভেট ইনজেকশন) অথবা Ace-Vet Bolus (এইস ভেট বোলাস) প্রয়োগ করতে হবে।
কৃষিবিদ মোহাম্মদ মারুফ*
* সহকারী তথ্য অফিসার (শস্য উৎপাদন), কৃষি তথ্য সার্ভিস, খামারবাড়ি, ফার্মগেট, ঢাকা-১২১৫